মার্ক অ্যান্ড কো. ইনকর্পোরেটেড (Merck & Co. Inc.), আমেরিকার বাইরে মার্ক শার্প অ্যান্ড ডোম (MSD) নামে পরিচিত, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর একটি। ১৮৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, ভ্যাকসিন, এবং স্বাস্থ্যসেবা সমাধানের জন্য বিখ্যাত। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির কেনিলওয়ার্থে সদর দপ্তর অবস্থিত মার্ক বিশ্বব্যাপী ১৪০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মূলমন্ত্র “Inventing for Life” স্বাস্থ্যসেবায় উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষের জীবন উন্নত করার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। এই ব্লগে আমরা মার্কের ইতিহাস, গবেষণা ও উন্নয়ন, স্থায়িত্ব, এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবায় এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।
মার্কের গল্প শুরু হয় ১৮৯১ সালে, যখন জর্জ মার্ক যুক্তরাষ্ট্রে মার্ক অ্যান্ড কো. প্রতিষ্ঠা করেন। এটি মূলত জার্মানির ডার্মস্টাড্টে ১৬৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মার্ক পরিবারের ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসার একটি শাখা ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকান শাখা স্বাধীন হয়ে যায় এবং মার্ক অ্যান্ড কো. হিসেবে পরিচিত হয়।২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, মার্ক গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) বিনিয়োগ বাড়ায়। ১৯৫৩ সালে শার্প অ্যান্ড ডোমের সাথে সংযুক্তি এটিকে আরও শক্তিশালী করে। মার্ক ভিটামিন, অ্যান্টিবায়োটিক, এবং ভ্যাকসিন তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৮৭ সালে এর স্ট্যাটিন ওষুধ মেভাকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বিপ্লব আনে। ২০০৪ সালে এইচপিভি ভ্যাকসিন গার্ডাসিল এবং ২০১৪ সালে ক্যান্সার চিকিৎসার ওষুধ কিট্রুডা প্রকাশ মার্কের উদ্ভাবনী শক্তি প্রদর্শন করে। ২০২৩ সালে, মার্কের বাজার মূল্য প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলার, এবং এটি ৭০,০০০-এর বেশি কর্মচারী নিয়োগ করে।
মার্কের পণ্য পোর্টফোলিওতে ওষুধ, ভ্যাকসিন, এবং পশু স্বাস্থ্য পণ্য অন্তর্ভুক্ত। এর প্রধান ক্ষেত্রগুলো হল:
মার্ক প্রতি বছর R&D-তে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। এর গবেষণাগারগুলো ক্যান্সার, সংক্রামক রোগ, এবং নিউরোলজিকাল ডিসঅর্ডারের উপর কাজ করে। বাংলাদেশে, মার্কের ওষুধ এবং ভ্যাকসিন স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
মার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহারে অগ্রণী। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ওষুধ আবিষ্কার ত্বরান্বিত করে। উদাহরণস্বরূপ, এআই-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো নতুন ওষুধের মলিকিউল সনাক্তকরণে সহায়তা করে। মার্ক বায়োটেকনোলজি এবং জিন থেরাপির উপরও বিনিয়োগ করছে। এর mRNA প্রযুক্তি ভ্যাকসিন উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।মার্ক ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা সমাধানেও কাজ করে। এর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম রোগীদের ওষুধ ব্যবহার এবং চিকিৎসার অগ্রগতি ট্র্যাক করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশে, মার্কের স্থানীয় অংশীদাররা ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে।
মার্ক স্থায়িত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য রাখে। কোম্পানিটি তার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শক্তি-দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উপর নির্ভর করে। মার্কের “Protecting the Planet” উদ্যোগ পানি সংরক্ষণ এবং বর্জ্য হ্রাসের উপর জোর দেয়।মার্ক সামাজিক দায়বদ্ধতায়ও অগ্রণী। এর “Merck for Mothers” প্রোগ্রাম বিশ্বব্যাপী মাতৃস্বাস্থ্য উন্নত করতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে, মার্ক স্থানীয় এনজিও-এর সাথে সহযোগিতায় স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্সেস বাড়াচ্ছে। এছাড়া, মার্ক বিনামূল্যে বা কম খরচে ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে সহায়তা করে।
Picture: istockphoto.com
মার্ক স্বাস্থ্যসেবা শিল্পে বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলেছে। এর ভ্যাকসিন এবং ওষুধ লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, মার্ক অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ মোলনুপিরাভির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে, মার্কের এইচপিভি ভ্যাকসিন এবং ডায়াবেটিস ওষুধ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অবদান রাখছে।মার্কের গবেষণা ও উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করে। এর ক্যান্সার চিকিৎসা এবং সংক্রামক রোগের ওষুধ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করছে। বাংলাদেশে, মার্ক স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করে।
মার্ক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। উচ্চ ওষুধের দাম, বিশেষ করে কিট্রুডার মতো ওষুধ, নিম্ন-আয়ের দেশে অ্যাক্সেস সীমিত করেছে। বাংলাদেশে, ওষুধের দাম এবং আমদানি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এছাড়া, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে প্রতিযোগিতা এবং পেটেন্ট মেয়াদ শেষ হওয়া মার্কের জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে, মার্ক জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সাথে অংশীদারিত্ব এবং কম খরচে ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলা করছে।
মার্ক ভবিষ্যতে এআই, বায়োটেকনোলজি, এবং জিন থেরাপির উপর বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এটি ক্যান্সার, অটোইমিউন রোগ, এবং সংক্রামক রোগের নতুন চিকিৎসা উন্নয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশে, মার্ক স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং সাশ্রয়ী ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে প্রভাব বাড়াতে চায়। এছাড়া, মার্ক ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা এবং টেলিমেডিসিনে অংশ নিচ্ছে।
মার্ক অ্যান্ড কো. ইনকর্পোরেটেড স্বাস্থ্যসেবায় উদ্ভাবনের একটি প্রতীক। এর ভ্যাকসিন, ওষুধ, এবং গবেষণা বিশ্বব্যাপী জীবন বাঁচাচ্ছে। বাংলাদেশে, মার্কের পণ্য এবং সামাজিক উদ্যোগ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করছে। ভবিষ্যতে, মার্ক নতুন প্রযুক্তি এবং সাশ্রয়ী সমাধানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় নেতৃত্ব দেবে।