13 Jul
13Jul

টয়োটার ইতিহাস

টয়োটা মোটর কর্পোরেশন ১৯৩৭ সালে কিইচিরো টয়োদা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা টয়োদা অটোমেটিক লুম ওয়ার্কসের একটি স্পিনঅফ হিসেবে শুরু হয়েছিল। ১৯৩৬ সালে টয়োটা তার প্রথম যাত্রীবাহী গাড়ি, টয়োটা এএ, উৎপাদন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, টয়োটা আমেরিকান অটোমেকারদের কাছ থেকে শিখে এবং টয়োটা প্রোডাকশন সিস্টেম (টিপিএস) প্রবর্তন করে, যা লিন ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ভিত্তি হয়ে ওঠে। ১৯৮২ সালে, টয়োটা মোটর কোম্পানি এবং টয়োটা মোটর সেলস কোম্পানি একীভূত হয়ে বর্তমান টয়োটা মোটর কর্পোরেশন গঠন করে।

টয়োটা প্রোডাকশন সিস্টেম (টিপিএস)

টয়োটার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো টয়োটা প্রোডাকশন সিস্টেম, যা কাইজেন (নিরন্তর উন্নতি) এবং জাস্ট-ইন-টাইম উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে। এই পদ্ধতি উৎপাদন দক্ষতা বাড়ায়, বর্জ্য হ্রাস করে, এবং গুণমান নিশ্চিত করে। টিপিএস বিশ্বব্যাপী শিল্পের জন্য একটি মডেল হয়ে উঠেছে এবং টয়োটাকে অটোমোটিভ শিল্পে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।

হাইব্রিড প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন

টয়োটা হাইব্রিড গাড়ির ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক, বিশেষ করে তাদের প্রিয়াস মডেলের মাধ্যমে, যা ১৯৯৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিক হাইব্রিড গাড়ি হিসেবে বাজারে আসে। টয়োটা মোটর ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্রান্স ২০২২ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ হাইব্রিড গাড়ি উৎপাদন করেছে। এছাড়াও, টয়োটা হাইড্রোজেন-চালিত যানবাহন, যেমন মিরাই, এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে।

গ্লোবাল উপস্থিতি

টয়োটা বিশ্বের ২৭টি দেশে উৎপাদন কারখানা পরিচালনা করে এবং ১৭০টিরও বেশি দেশে তাদের পণ্য বাজারজাত করে। টয়োটা মোটর নর্থ আমেরিকা, যার সদর দপ্তর টেক্সাসের প্লানোতে, কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০২৩ সালে, টয়োটা বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ মিলিয়ন গাড়ি উৎপাদন করে, যা তাদের বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোটিভ নির্মাতার মর্যাদা দেয়।

সাসটেইনেবিলিটি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা

টয়োটা সাসটেইনেবিলিটির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে কার্বন নিরপেক্ষতা এবং শূন্য শিল্প জল ক্রয়ের লক্ষ্য। ২০২৫ সালে, টয়োটা "হোয়াইট ৫০০" এবং "স্পোর্টস ইয়েল কোম্পানি ২০২৫+" হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তারা ইউরোপে ব্রাসেলসে সৌর প্যানেল এবং উইন্ড টারবাইন স্থাপন করেছে এবং ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে।

টয়োটা মোটর কর্পোরেশন: অটোমোটিভ শিল্পের অগ্রপথিক

Picture: istockphoto.com

টয়োটার বাজার প্রভাব

২০০৮ সালে টয়োটা প্রথমবারের মতো জেনারেল মোটরসকে অতিক্রম করে বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোটিভ নির্মাতা হয়। ২০২৩ সালে, টয়োটা ফোক্সওয়াগনকে হটিয়ে টানা চতুর্থ বছরের জন্য শীর্ষ গাড়ি নির্মাতার মর্যাদা ধরে রাখে। তবে, ২০২৫ সালে টয়োটা ৩৫% মুনাফা হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে, যা জাপানি অটোমেকারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং সময় নির্দেশ করে।

চ্যালেঞ্জ এবং পুনরুদ্ধার

টয়োটা ২০১১ সালে তোহোকু ভূমিকম্প এবং থাইল্যান্ডের বন্যার কারণে উৎপাদন ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যার ফলে ৩৯০,০০০ ইউনিট উৎপাদন হ্রাস পায়। ২০১০ সালে, টাকাটা এয়ারব্যাগ সমস্যার কারণে বিশ্বব্যাপী ৮ মিলিয়ন গাড়ি রিকল করা হয়। তবুও, টয়োটা তাদের গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতার জন্য খ্যাতি ধরে রেখেছে।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

টয়োটা "মোবিলিটি ফর অল" দৃষ্টিভঙ্গির অধীনে একটি মোবিলিটি কোম্পানিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তারা ডিজিটাল কী এবং স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের মতো সংযুক্ত পরিষেবা, যেমন টয়োটা/লেক্সাস কমন আইডি, প্রবর্তন করছে। ২০৩০ সালে টয়োটা তাদের নতুন টোকিও হেড অফিসে সফটওয়্যার উন্নয়ন এবং অংশীদারিত্বের উপর জোর দিচ্ছে।

উপসংহার

টয়োটা মোটর কর্পোরেশন অটোমোটিভ শিল্পে উদ্ভাবন, গুণমান, এবং সাসটেইনেবিলিটির প্রতীক। তাদের টয়োটা প্রোডাকশন সিস্টেম, হাইব্রিড প্রযুক্তি, এবং গ্লোবাল উপস্থিতি তাদের শিল্প নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভবিষ্যতে, টয়োটা মোবিলিটি সমাধান এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলতে থাকবে।

Comments
* The email will not be published on the website.