07 Apr
07Apr

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI (Artificial Intelligence) আজকের বিশ্বে একটি বৈপ্লবিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। চিকিৎসা, শিক্ষা, শিল্প, এমনকি দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এই প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসে—AI কি মানবজাতির জন্য হুমকি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা এলন মাস্ক এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের দিকে তাকিয়েছি।


এলন মাস্কের দৃষ্টিভঙ্গি

ইলন মাস্ক, যিনি স্পেসএক্স, টেসলা এবং xAI-এর মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, AI নিয়ে বারবার সতর্কবার্তা দিয়ে এসেছেন। তিনি AI-কে "মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ২০২৩ সালে একটি সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, "AI সভ্যতা ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।" তিনি বিশ্বাস করেন যে, অতি উন্নত AI যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা মানুষের অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। 

মাস্কের মতে, মানুষ একটি "জৈবিক বুটলোডার" হিসেবে কাজ করছে, যারা AI-এর মতো ডিজিটাল সুপারইন্টেলিজেন্সকে জন্ম দিচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন একটি কম্পিউটারে বুটলোডার অপারেটিং সিস্টেম চালু করে, তেমনি মানুষ AI-এর জন্য পথ প্রশস্ত করছে, যা একদিন আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মাস্ক AI-এর উন্নয়নের বিরোধী নন। তিনি xAI নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার লক্ষ্য মানব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করা। তবে তিনি AI-এর নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের পক্ষে। তাঁর মতে, যদি সঠিক নিয়মনীতি প্রণয়ন করা না হয়, তবে AI-এর অপব্যবহারের ঝুঁকি অনেক বেশি।


অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতামত

মাস্কের মতোই বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞ AI-এর সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে উদ্বিগ্ন। 

প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একবার বলেছিলেন, "AI-এর পূর্ণ বিকাশ মানবজাতির শেষ হতে পারে।" তিনি বিশ্বাস করতেন যে, AI যদি মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে, তবে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।

অন্যদিকে, গুগলের প্রাক্তন AI গবেষক টিমনিট গেব্রু এবং মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও AI-এর নৈতিক ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন। গেটস বলেন, "আমি তাদের মধ্যে আছি যারা AI-এর সুপারইন্টেলিজেন্স নিয়ে চিন্তিত।" তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, সঠিকভাবে ব্যবহার করলে AI মানবতার জন্য অপার সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে।কিন্তু সবাই মাস্ক বা হকিং-এর সঙ্গে একমত নন। 

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ মাস্কের সতর্কতাকে "দায়িত্বজ্ঞানহীন" বলে সমালোচনা করেছেন। জাকারবার্গের মতে, AI আমাদের জীবনকে আরও উন্নত করবে এবং এর ভয়ে প্রযুক্তির উন্নয়ন থামানো উচিত নয়। 

একইভাবে, AI গবেষক অ্যান্ড্রু এনজি বলেন, "AI-এর বিপদ নিয়ে অতিরিক্ত ভয় অযৌক্তিক। আমাদের ফোকাস থাকা উচিত এটিকে কীভাবে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করা যায়।


AI-এর সম্ভাব্য হুমকি

AI কীভাবে মানবজাতির জন্য হুমকি হতে পারে? প্রথমত, যদি AI স্বায়ত্তশাসিত হয়ে যায় এবং মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে এটি অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সামরিক ক্ষেত্রে AI-চালিত অস্ত্র মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই যুদ্ধ শুরু করতে পারে। 

দ্বিতীয়ত, AI-এর অপব্যবহারের মাধ্যমে জৈব অস্ত্র বা সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়তে পারে। 

তৃতীয়ত, AI যদি চাকরির বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, তবে অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।


AI-এর সম্ভাবনা

অন্যদিকে, AI-এর ইতিবাচক দিকগুলোও উপেক্ষণীয় নয়। মহামারী নিয়ন্ত্রণে AI-এর ভূমিকা (যেমন COVID-19), জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান, এবং চিকিৎসা গবেষণায় এর অবদান অসাধারণ। 

উদাহরণস্বরূপ, AI ইতিমধ্যে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নির্ণয়ে এবং ভ্যাকসিন উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।


উপসংহার

AI মানবজাতির জন্য হুমকি না সম্ভাবনা—এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আমরা কীভাবে এটিকে ব্যবহার করি তার ওপর। এলন মাস্কের সতর্কতা আমাদের সচেতন করে, যেখানে জাকারবার্গের আশাবাদ আমাদের সম্ভাবনার দিকে ঠেলে দেয়। 

বিশেষজ্ঞদের মতামত বিভক্ত হলেও একটি বিষয়ে সবাই একমত—AI-এর উন্নয়ন ও ব্যবহারে নৈতিকতা ও নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। 

ভবিষ্যতে AI-কে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আমাদের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে হবে।

Comments
* The email will not be published on the website.