অনেক দিন আগের কথা, এক ছোট্ট গ্রামে বাস করত ধনেশ্বর নামে এক বণিক। ধনেশ্বরের একটাই স্বপ্ন ছিল—পৃথিবীর সব সম্পদ নিজের করে নেওয়া। তার ধারণা ছিল, পৃথিবী যেন তার জন্যই অফুরন্ত সম্পদ সঞ্চয় করে রেখেছে। সে গ্রামের কাছের জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে বিক্রি করত, নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে তুলত, এমনকি ফসলের জমি থেকেও অতিরিক্ত ফলন নিয়ে বিক্রি করত। কিন্তু কখনো সে প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞতা জানাত না, বা গ্রামের দরিদ্রদের সঙ্গে ভাগ করে নিত না।
একদিন, ধনেশ্বর আরও বেশি লাভের আশায় জঙ্গলের গভীরে গেল। সেখানে সে একটি প্রাচীন গাছ দেখল, যার ছায়ায় ফলের ভরা গাছ আর ফুলের সমারোহ। ধনেশ্বর ভাবল, “এই গাছের সব ফল আর কাঠ আমি নিয়ে যাব। এত সম্পদ আমাকে রাজা বানাবে!” সে গাছ কাটতে শুরু করল। হঠাৎ, একটি মৃদু কণ্ঠস্বর তাকে থামতে বলল। সে চারপাশে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখল না। কণ্ঠস্বর আবার বলল, “ধনেশ্বর, পৃথিবী সবাইকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, কিন্তু তোমার লোভের জন্য নয়।”
ধনেশ্বর ভয় পেল, কিন্তু তার লোভ তাকে থামতে দিল না। সে গাছ কাটতে থাকল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, গাছের প্রতিটি কাটা অংশ আবার জোড়া লাগতে শুরু করল। ধনেশ্বর হতাশ হয়ে চিৎকার করল, “পৃথিবী, তুমি আমাকে কেন বাধা দিচ্ছ?” তখন কণ্ঠস্বর আবার বলল, “পৃথিবী দেয়, কিন্তু নেয়ও। তুমি যদি শুধু নিতে শেখো, তবে কিছুই তোমার থাকবে না।”
সেই রাতে, ধনেশ্বরের গুদামে আগুন লাগল। তার সঞ্চিত সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেল। সে গ্রামের মানুষের কাছে সাহায্য চাইল, কিন্তু যাদের সে কখনো সাহায্য করেনি, তারা তাকে উপেক্ষা করল। অবশেষে, এক বৃদ্ধ কৃষক তাকে একটি বীজ দিয়ে বলল, “এই বীজ রোপণ করো, যত্ন করো। পৃথিবী তোমাকে আবার সুযোগ দেবে।”
ধনেশ্বর সেই বীজ রোপণ করল। সে গাছের যত্ন নিল, পানি দিল, এবং ধীরে ধীরে গাছটি বড় হল। গাছটি ফল দিল, আর ধনেশ্বর সেই ফল গ্রামের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিল। সে বুঝল, পৃথিবীর দান সবার জন্য, এবং লোভ শুধু ধ্বংস ডেকে আনে।
গ্রামের মানুষ ধনেশ্বরকে আবার গ্রহণ করল। তারা একসঙ্গে গাছ লাগাল, নদী পরিষ্কার করল, আর পৃথিবীর উদারতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাল। ধনেশ্বরের জীবন আর লোভের ছায়ায় নয়, বরং পৃথিবীর সঙ্গে মিলেমিশে চলার আনন্দে ভরে উঠল।
শিক্ষা: পৃথিবী আমাদের প্রয়োজন মেটায়, কিন্তু লোভ আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলাই জীবনের প্রকৃত সুখ।