23 Apr
23Apr

একটি ছোট গ্রামে বাস করত সরলা, একজন দক্ষ তাঁতি। তার হাতে বোনা শাড়ি আর কাপড়ের খ্যাতি ছিল সুদূর পর্যন্ত। কিন্তু সরলার জীবন ছিল কঠিন। তার স্বামী মারা গিয়েছিলেন বছর দুয়েক আগে, আর তার ছোট্ট ছেলে রোজ সন্ধ্যায় ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদত। তবুও সরলা কখনো হাল ছাড়েনি। সে ভোর থেকে রাত অবধি তাঁত চালিয়ে যেত, যাতে তার ছেলের মুখে হাসি ফোটে।

গ্রামের মানুষ সরলার কষ্ট দেখত, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসত না। একদিন, গ্রামে এক ভয়ানক ঝড় এলো। বন্যায় অনেকের ঘর ভেসে গেল, ফসল নষ্ট হলো। গ্রামবাসীদের কাপড়-চোপড় ভিজে গেল, শীতে কাঁপতে লাগল তারা। সরলা তার ছোট্ট ঘরে বসে এই দৃশ্য দেখল। তার হাতে তখন মাত্র দুটি শাড়ি ছিল, যা সে বাজারে বিক্রি করে ছেলের জন্য খাবার কিনতে চেয়েছিল।

কিন্তু সরলার মন বলল, “আমার ছেলে একদিন না খেলেও বাঁচবে, কিন্তু গ্রামের এই মানুষগুলো শীতে মারা যাবে।” সে তার শাড়ি দুটি নিয়ে গ্রামে গেল। একটি শাড়ি সে দিল এক বৃদ্ধার হাতে, যে শীতে কাঁপছিল। আরেকটি শাড়ি সে কেটে ছোট ছোট টুকরো করে বাচ্চাদের মধ্যে বিলিয়ে দিল, যাতে তারা শরীর ঢেকে নিজেদের বাঁচাতে পারে।

সেদিন রাতে সরলার ছেলে ক্ষুধায় কাঁদল। সরলা তাকে বুকে জড়িয়ে বলল, “আমরা কাল খাবার জোগাড় করব, কিন্তু আজ আমরা কিছু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছি। এর চেয়ে বড় সুখ আর কী আছে?” ছেলেটি মায়ের কথা বুঝল না, কিন্তু তার কান্না থেমে গেল।

পরদিন সকালে গ্রামের মানুষ সরলার দরজায় এলো। তারা সবাই মিলে সরলার জন্য খাবার, কাপড়, এমনকি নতুন তাঁতের সুতো এনে দিল। তারা বলল, “তুমি আমাদের বাঁচিয়েছ, এবার আমরা তোমাকে বাঁচাব।” সরলার চোখে পানি এলো। সে বুঝল, জীবনের প্রকৃত অর্থ শুধু নিজের জন্য বাঁচা নয়, বরং অন্যদের জন্য কিছু করা।

সেই দিন থেকে সরলা আরও উৎসাহে কাজ করতে লাগল। সে তার বোনা কাপড়ের একটা অংশ সবসময় গ্রামের গরিবদের জন্য রাখত। তার ছেলে বড় হয়ে মায়ের পথেই চলল। গ্রামের মানুষ সরলাকে ভুলে গেল না। তারা বলত, “সরলার জীবন আমাদের শিখিয়েছে—অন্যের জন্য বাঁচলেই জীবন অর্থপূর্ণ হয়।”

শিক্ষা: “আপনার জীবন অন্যদের জন্য কাজ করলে তবেই তা অর্থপূর্ণ হয়।”— আলবার্ট আইনস্টাইন। নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রকৃত সুখ ও অর্থ খুঁজে পাই।

মন্তব্য
* ইমেলটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে না।