08 Aug
08Aug

ভূমিকা

বিশ্বের দ্রুত নগরায়নের ফলে শহরগুলো পরিবেশ দূষণ, ট্রাফিক জট, এবং সম্পদের অপচয়ের মতো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে, যেখানে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো শহরগুলো জনসংখ্যার চাপে বিপর্যস্ত, পরিবেশবান্ধব শহর গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। পরিবেশবান্ধব শহর এমন একটি শহর, যেখানে কার্বন নিঃসরণ কমানো, প্রাকৃতিক সম্পদের দক্ষ ব্যবহার, এবং টেকসই জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা হয়। প্রযুক্তি এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নবায়নযোগ্য শক্তি, স্মার্ট সিটি প্রযুক্তি, টেকসই পরিবহন, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো প্রযুক্তি শহরকে আরও বাসযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলছে। এই নিবন্ধে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে প্রযুক্তির ভূমিকা, চ্যালেঞ্জ, এবং সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

পরিবেশবান্ধব শহর কী?

পরিবেশবান্ধব শহর বা গ্রিন সিটি এমন একটি শহর, যা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নের উপর জোর দেয়। এর বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার।
  • দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থা।
  • সবুজ পরিবহন ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক জট নিয়ন্ত্রণ।
  • শক্তি-দক্ষ ভবন এবং অবকাঠামো।
  • সবুজ স্থান, যেমন পার্ক এবং বৃক্ষরোপণ।
  • জল সংরক্ষণ এবং পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ।

বাংলাদেশে ঢাকার মতো শহর, যেখানে বায়ু দূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় সমস্যা, পরিবেশবান্ধব শহর গড়ে তোলা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং জনস্বাস্থ্য উন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।

পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে প্রযুক্তির ভূমিকা

প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে বিভিন্ন উপায়ে অবদান রাখছে। নিম্নে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রধান প্রযুক্তিগুলোর ভূমিকা উল্লেখ করা হলো:

১. নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার

নবায়নযোগ্য শক্তি শহরের শক্তি চাহিদা পূরণে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে কাজ করে এবং কার্বন নিঃসরণ কমায়।

  • সৌরশক্তি: শহরের ভবন, স্ট্রিট লাইট, এবং পাবলিক স্থানে সোলার প্যানেল স্থাপন।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সোলার-চালিত স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার কিছু বাণিজ্যিক ভবনে ছাদে সোলার প্যানেল ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • বায়ুশক্তি: শহরের কাছাকাছি বায়ু টারবাইন স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: কক্সবাজারে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হচ্ছে, যা উপকূলীয় শহরগুলোর জন্য শক্তি সরবরাহ করতে পারে।
  • জৈবশক্তি: শহরের জৈব বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রকল্প চলছে।

প্রভাব: নবায়নযোগ্য শক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমায়, বায়ু দূষণ হ্রাস করে, এবং শহরের শক্তি ব্যবস্থাকে টেকসই করে।

২. স্মার্ট গ্রিড এবং শক্তি দক্ষতা

স্মার্ট গ্রিড এবং শক্তি-দক্ষ প্রযুক্তি শহরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকে আরও দক্ষ এবং পরিবেশবান্ধব করে।

  • স্মার্ট গ্রিড: এটি বিদ্যুৎ বিতরণে ক্ষতি কমায় এবং চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার কিছু এলাকায় স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে, যা বিদ্যুৎ ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে।
  • শক্তি-দক্ষ যন্ত্রপাতি: LED লাইটিং, স্মার্ট এয়ার কন্ডিশনার, এবং শক্তি-দক্ষ অ্যাপ্লায়েন্স।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: সরকারি ভবন এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে LED লাইটিং ব্যবহার বাড়ছে।
  • স্মার্ট লাইটিং: সেন্সর-ভিত্তিক স্ট্রিট লাইট, যা প্রয়োজন অনুযায়ী আলো জ্বালায়।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার কিছু এলাকায় স্মার্ট স্ট্রিট লাইট পরীক্ষামূলকভাবে চালু।

প্রভাব: শক্তি দক্ষতা বিদ্যুৎ অপচয় কমায় এবং শহরের শক্তি খরচ হ্রাস করে, যা পরিবেশের উপর চাপ কমায়।

৩. টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা

শহরের পরিবহন খাত বায়ু দূষণ এবং কার্বন নিঃসরণের একটি প্রধান উৎস। টেকসই পরিবহন এই সমস্যার সমাধান করে।

  • বৈদ্যুতিক যানবাহন (EV): বৈদ্যুতিক বাস, রিকশা, এবং গাড়ি জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকায় বৈদ্যুতিক রিকশা এবং বাস চালু হচ্ছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
  • পাবলিক ট্রান্সপোর্ট: মেট্রো রেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (BRT), এবং ট্রাম।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকা মেট্রো রেল প্রকল্প ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ চালু হবে, যা ট্রাফিক জট এবং দূষণ কমাবে।
  • সাইকেল লেন এবং শেয়ারিং: শহরে সাইকেল চালানোর জন্য ডেডিকেটেড লেন এবং শেয়ারিং প্রোগ্রাম।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার কিছু এলাকায় সাইকেল শেয়ারিং প্রকল্প চালু হয়েছে।

প্রভাব: টেকসই পরিবহন বায়ু দূষণ, ট্রাফিক জট, এবং কার্বন নিঃসরণ কমায়, শহরকে আরও বাসযোগ্য করে।

৪. দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পুনর্ব্যবহার

শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশ দূষণ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তি এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • স্মার্ট বর্জ্য সংগ্রহ: সেন্সর-ভিত্তিক বিন, যা বর্জ্য পূর্ণ হলে সংগ্রহের জন্য সিগন্যাল পাঠায়।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরীক্ষামূলকভাবে চালু।
  • বর্জ্য থেকে শক্তি: জৈব বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: Waste Concern-এর মাধ্যমে ঢাকায় জৈব বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট এবং বায়োগ্যাস উৎপাদন।
  • প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার: প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে নতুন পণ্য তৈরি।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার প্রকল্প চালাচ্ছেন।

প্রভাব: দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মিথেন নিঃসরণ এবং ল্যান্ডফিলের চাপ কমায়, শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখে।

৫. গ্রিন বিল্ডিং এবং টেকসই অবকাঠামো

গ্রিন বিল্ডিং শহরে শক্তি এবং সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করে।

  • শক্তি-দক্ষ ভবন: সৌর প্যানেল, তাপ নিরোধক, এবং স্মার্ট হোম সিস্টেম।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার কিছু বাণিজ্যিক ভবনে LEED (Leadership in Energy and Environmental Design) সার্টিফিকেশন প্রয়োগ করা হচ্ছে।
  • সবুজ ছাদ: ভবনের ছাদে গাছ লাগানো এবং সৌর প্যানেল স্থাপন।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার কিছু আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবনে সবুজ ছাদ প্রকল্প চালু।
  • টেকসই নির্মাণ সামগ্রী: পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ এবং পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার নতুন নির্মাণ প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবহার।

প্রভাব: গ্রিন বিল্ডিং শক্তি খরচ এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, শহরের তাপ দ্বীপ প্রভাব কমায়।

৬. স্মার্ট সিটি প্রযুক্তি

স্মার্ট সিটি প্রযুক্তি শহরের সম্পদ এবং পরিষেবা ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ করে।

  • ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT): সেন্সর-ভিত্তিক ট্রাফিক, বিদ্যুৎ, এবং জল ব্যবস্থাপনা।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকায় স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল এবং সিসিটিভি ক্যামেরা পরীক্ষামূলকভাবে চালু।
  • ডেটা অ্যানালিটিক্স: শহরের সম্পদ ব্যবহারের পূর্বাভাস এবং অপ্টিমাইজেশন।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডেটা বিশ্লেষণ ব্যবহারের পরিকল্পনা।
  • স্মার্ট সেন্সর: বর্জ্য বিন, পানি পাইপ, এবং বিদ্যুৎ লাইনে সেন্সর ব্যবহার।

প্রভাব: স্মার্ট প্রযুক্তি শহরের সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং পরিবেশের উপর চাপ কমায়।

৭. জল সংরক্ষণ এবং পানি ব্যবস্থাপনা

শহরে পানির অপচয় এবং দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। প্রযুক্তি এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ: শহরে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং পুনঃব্যবহার।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার কিছু ভবনে রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম স্থাপন।
  • জল পরিশোধন: সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব পানি পরিশোধন প্রযুক্তি।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: UNICEF-এর সহযোগিতায় ঢাকার স্লাম এলাকায় পানি পরিশোধন ব্যবস্থা।
  • স্মার্ট সেচ: শহরের পার্ক এবং সবুজ স্থানে পানির দক্ষ ব্যবহার।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার পার্কে স্মার্ট সেচ ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু।

প্রভাব: জল সংরক্ষণ পানির অভাব মোকাবিলা করে এবং শহরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৮. সবুজ স্থান এবং বৃক্ষরোপণ

প্রযুক্তি শহরে সবুজ স্থান বাড়াতে এবং বৃক্ষরোপণকে দক্ষ করতে সহায়তা করে।

  • উল্লম্ব বাগান: ভবনের দেওয়ালে গাছ লাগানোর প্রযুক্তি।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার কিছু বাণিজ্যিক ভবনে উল্লম্ব বাগান প্রকল্প।
  • স্মার্ট বৃক্ষরোপণ: সেন্সর-ভিত্তিক গাছের রক্ষণাবেক্ষণ।
    • বাংলাদেশে উদাহরণ: ঢাকার পার্কে গাছের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে প্রযুক্তি ব্যবহার।
  • ড্রোন বৃক্ষরোপণ: শহরের প্রত্যন্ত এলাকায় গাছ লাগানোর জন্য ড্রোন।

প্রভাব: সবুজ স্থান শহরের তাপমাত্রা কমায়, বায়ু পরিশোধন করে, এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।

বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শহর গড়ার চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  • অর্থায়নের অভাব: স্মার্ট সিটি প্রযুক্তি, সোলার প্যানেল, এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য উচ্চ প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রয়োজন।
  • প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি: দক্ষ প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান, এবং ডেটা বিশ্লেষকের অভাব।
  • জনসচেতনতার অভাব: শহরবাসীর মধ্যে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা কম।
  • অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা: সীমিত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ইন্টারনেট সংযোগ স্মার্ট প্রযুক্তির প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে।
  • নিয়ন্ত্রক সমস্যা: পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং স্মার্ট সিটির জন্য স্পষ্ট নীতি এবং প্রণোদনার অভাব।
  • জনসংখ্যার চাপ: ঢাকার মতো শহরে অতিরিক্ত জনসংখ্যা পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর বাস্তবায়নকে জটিল করে।

সমাধানের উপায়

পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে নিম্নলিখিত সমাধানগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • অর্থায়ন:
    • আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন Green Climate Fund এবং Asian Development Bank (ADB), থেকে তহবিল সংগ্রহ।
    • সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) মডেলের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণ।
    • পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে কর ছাড় এবং ভর্তুকি প্রদান।
  • প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন:
    • বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে স্মার্ট সিটি, নবায়নযোগ্য শক্তি, এবং গ্রিন টেকনোলজির উপর কোর্স চালু।
    • তরুণদের জন্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ এবং স্টার্টআপ সহায়তা।
    • অনলাইন শিক্ষা উদাহরণ:
      • Coursera: Smart Cities – Management of Smart Urban Infrastructures (École Polytechnique Fédérale de Lausanne) – সময়কাল: ৫ সপ্তাহ, মূল্য: $49/মাস।
      • edX: Sustainable Urban Development (Delft University of Technology) – সময়কাল: ৭ সপ্তাহ, মূল্য: বিনামূল্যে অডিট।
      • Alison: Introduction to Green Technology – সময়কাল: ২-৩ ঘণ্টা, মূল্য: বিনামূল্যে।
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি:
    • সামাজিক মাধ্যম, টেলিভিশন, এবং কমিউনিটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সুবিধা প্রচার।
    • স্কুল এবং কলেজে পরিবেশ শিক্ষা প্রচলন।
  • নীতি প্রণয়ন:
    • পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির জন্য স্পষ্ট নীতি এবং নির্দেশিকা প্রণয়ন।
    • গ্রিন বিল্ডিং এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য প্রণোদনা।
    • শহর পরিকল্পনায় সবুজ স্থান এবং টেকসই অবকাঠামোর উপর জোর দেওয়া।
  • অবকাঠামো উন্নয়ন:
    • বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট অবকাঠামোর সম্প্রসারণ।
    • শহরের প্রত্যন্ত এলাকায় নবায়নযোগ্য শক্তির প্রকল্প চালু।
ঢাকায় একটি পরিবেশবান্ধব শহরে সোলার প্যানেল, সবুজ ভবন, এবং বৈদ্যুতিক বাস, যা প্রযুক্তির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করে।

বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শহর গড়ার সম্ভাবনা

বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শহর গড়ার জন্য বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ এবং সম্ভাবনা তুলে ধরা হলো:

  • ঢাকা মেট্রো রেল: এই প্রকল্প ট্রাফিক জট এবং বায়ু দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি সম্পূর্ণ চালু হলে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা আরও টেকসই হবে।
  • সোলার-চালিত স্ট্রিট লাইট: ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সোলার-চালিত স্ট্রিট লাইটের ব্যবহার শক্তি খরচ কমাচ্ছে।
  • গ্রিন বিল্ডিং: ঢাকার বাণিজ্যিক এবং আবাসিক ভবনে শক্তি-দক্ষ ডিজাইন এবং LEED সার্টিফিকেশনের প্রয়োগ বাড়ছে।
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পুনর্ব্যবহার এবং বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন প্রকল্প পরিবেশ দূষণ কমাচ্ছে।
  • পূর্বাচল নতুন শহর: এই প্রকল্পে স্মার্ট এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব শহরের মডেল হতে পারে।
  • সরকারি উদ্যোগ: বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির ১০% লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা শহরের শক্তি ব্যবস্থাকে টেকসই করবে।

বিশ্বের পরিবেশবান্ধব শহর থেকে শিক্ষা

বিশ্বের কিছু পরিবেশবান্ধব শহর বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে:

  • কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক: সাইকেল লেন, বায়ু শক্তি, এবং শক্তি-দক্ষ ভবনের জন্য বিখ্যাত।
  • সিঙ্গাপুর: স্মার্ট সিটি প্রযুক্তি, উল্লম্ব বাগান, এবং জল সংরক্ষণে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
  • ফ্রাইবুর্গ, জার্মানি: সোলার শক্তি এবং গ্রিন বিল্ডিংয়ের জন্য পরিচিত।

শিক্ষা: বাংলাদেশ এই শহরগুলোর থেকে স্মার্ট পরিকল্পনা, জনসচেতনতা, এবং প্রযুক্তি বিনিয়োগের মডেল গ্রহণ করতে পারে।

উপসংহার

পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে প্রযুক্তি একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। নবায়নযোগ্য শক্তি, স্মার্ট গ্রিড, টেকসই পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গ্রিন বিল্ডিং, এবং স্মার্ট সিটি প্রযুক্তি বাংলাদেশের শহরগুলোকে আরও বাসযোগ্য, টেকসই, এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলতে পারে। যদিও অর্থায়ন, দক্ষতার অভাব, এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সরকার, বেসরকারি খাত, এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি শিক্ষা এবং উদ্ভাবনের জন্য উৎসাহিত করা উচিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, এবং অন্যান্য শহরকে পরিবেশবান্ধব করতে সঠিক পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।


আপনার মতামত: বাংলাদেশের কোন শহরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন? আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করুন!

মন্তব্যসমূহ
* ইমেইলটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে না।