জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে গ্রিন টেক বা সাসটেইনেবল প্রযুক্তির গবেষণা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালে, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (WEF)-এর টপ ১০ ইমার্জিং টেকনোলজি রিপোর্ট অনুসারে, গ্রিন টেকের নতুন ক্ষেত্র যেমন গ্রিন নাইট্রোজেন, আর্টিফিশিয়াল ফটোসিন্থেসিস এবং প্ল্যান্ট-বেসড বায়োম্যানুফ্যাকচারিং খাদ্য নিরাপত্তা এবং ডেকার্বোনাইজেশনকে রূপান্তরিত করছে। Deloitte-এর ২০২৫ রিনিউয়েবল এনার্জি আউটলুক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কার্বন ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজিগুলো নতুন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পলিসির কারণে বৃদ্ধি পাবে, যা গবেষণাকে ত্বরান্বিত করবে।
S&P Global-এর ক্লিনটেক ট্রেন্ডস ২০২৫ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সোলার PV-এর বিনিয়োগ ক্লিনটেকের অর্ধেক দখল করবে, এবং নতুন গবেষণা যেমন AI-এর এনার্জি হাঙ্গার মোকাবিলায় ফোকাস করবে।
বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে জলবায়ু ঝুঁকি উচ্চ, এই গবেষণা স্থানীয় সমস্যা যেমন বন্যা এবং খরা মোকাবিলায় সাহায্য করবে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উৎসব ২০২৫-এর মতো ইভেন্টগুলো এই ক্ষেত্রে নতুন আইডিয়া উত্থাপন করছে।
এই লেখায় আমরা ২০২৫-এর নতুন গবেষণা ক্ষেত্রগুলো বিস্তারিত আলোচনা করব, উদাহরণসহ, যা গবেষক, স্টুডেন্ট এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য উপযোগী।
কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ (CCS) ২০২৫-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ক্ষেত্র। Greenly-এর রিপোর্ট অনুসারে, এই টেক অ্যাটমোস্ফিয়ার থেকে CO₂ ক্যাপচার করে সিন্থেটিক ফুয়েল তৈরি করে, যা খরচ ৬ গুণ কমলে স্কেলেবল হবে। Carbontrail-এর টপ ৬ ক্লাইমেট টেক ট্রেন্ডসে CCS-কে প্রথম স্থান দেওয়া হয়েছে, যা AI এবং ML-এর সাথে একীভূত হয়ে কার্বন ট্র্যাকিং উন্নত করছে।
WEF-এর ২০২৫ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি CCS-কে সেন্টার স্টেজে নিয়ে এসেছে, যা ১.৫°সি লিমিট অতিক্রম রোধে সাহায্য করবে। বাংলাদেশে, SREDA-এর সাথে যুক্ত গবেষণা CCS-কে সিমেন্ট এবং টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রয়োগ করছে, যা দেশের ২০% নির্গমন কমাতে পারে। নতুন গবেষণায়, ডিরেক্ট এয়ার ক্যাপচার (DAC) এবং বায়ো-CCS একীভূত হয়ে বায়োডাইভার্সিটি রক্ষায় সাহায্য করছে।
এই ক্ষেত্রে গবেষণার সম্ভাবনা অপার: AI-এনহ্যান্সড CCS সিস্টেম যা রিয়েল-টাইম মনিটরিং করে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১ গিগাটন CO₂ ক্যাপচার করতে পারে। বাংলাদেশের Green Tech 2025 কনফারেন্সে এই টেকের উপর ফোকাস করা হয়েছে।
গ্রিন নাইট্রোজেন ২০২৫-এর WEF টপ ১০ ইমার্জিং টেকনোলজির একটি, যা বিদ্যুতের মাধ্যমে নাইট্রোজেন ফার্টিলাইজার তৈরি করে ফসিল ফুয়েলের উপর নির্ভরতা কমায়। এটি কৃষিতে দূষণ এবং নির্গমন কমিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ায়। X পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এটি গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি এনহ্যান্স করবে।
গবেষণায়, ইলেকট্রোকেমিক্যাল প্রসেস এবং গ্রিন হাইড্রোজেনের সাথে একীভূত হয়ে এটি ৫০% কম এনার্জি খরচ করে। বাংলাদেশের কৃষি খাতে, যেখানে ফার্টিলাইজার ইম্পোর্ট ৮০% , এই গবেষণা লোকাল প্রোডাকশন সম্ভব করবে। IRRI-এর মতো সংস্থা এটি টেস্ট করছে, যা লবণাক্ততা-সহনশীল ফসলের সাথে যুক্ত।
নতুন ফ্রন্টিয়ার: মেটাবলিক রিপ্রোগ্রামিং এবং প্ল্যান্ট-বেসড বায়োম্যানুফ্যাকচারিং, যা SCI-এর ৩৪ ইমার্জিং টেক লিস্টে রয়েছে। এগুলো কৃষিতে কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন বাড়িয়ে নির্গমন কমাবে।
আর্টিফিশিয়াল ফটোসিন্থেসিস গবেষণা ২০২৫-এ সোলার এনার্জির ফিউচার বদলে দিচ্ছে। X পোস্টে বলা হয়েছে যে, ডাই মলিকিউল-স্ট্যাকড স্ট্রাকচার লাইট অ্যাবজর্প করে চার্জ সেপারেট করে, যা ক্লিন ফুয়েল তৈরি করে। এটি প্ল্যান্টসের প্রক্রিয়া অনুকরণ করে দক্ষতা বাড়ায়।
Renewable Institute-এর রিপোর্টে এটি ডেকার্বোনাইজেশনের অংশ, যা AI-এর এনার্জি হাঙ্গার মোকাবিলায় সাহায্য করবে। গবেষণায়, ন্যানোম্যাটেরিয়ালস এবং ক্যাটালিস্ট উন্নয়ন ফোকাস, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২০% সোলার এফিশিয়েন্সি বাড়াতে পারে। বাংলাদেশে, BUET-এর গবেষণা এটি সোলার ফার্মে প্রয়োগ করছে।
জিওইঞ্জিনিয়ারিং যেমন সোলার রেডিয়েশন ম্যানেজমেন্ট (SRM) ২০২৫-এ নতুন গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। X পোস্টে UK-এর £৫০ মিলিয়ন প্রোগ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা ক্লাউড ব্রাইটেনিং এবং রিফ্লেকটিভ পার্টিকেল টেস্ট করবে। এটি গ্রহকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করবে, কিন্তু বিতর্কিত।
WEF-এর রিপোর্টে R&D ফোকাস SRM-কে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা নিউক্লিয়ার টিপিং পয়েন্টের সাথে যুক্ত। গবেষণায়, স্মার্ট ম্যাটেরিয়ালস এবং AI সিমুলেশন ফোকাস, যা ঝুঁকি মূল্যায়ন করে। বাংলাদেশে, উপকূলীয় সুরক্ষায় এটি প্রয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন Green Tech 2025 কনফারেন্সে আলোচিত।
SCI-এর ৩৪ ইমার্জিং টেক লিস্টে প্ল্যান্ট-বেসড বায়োম্যানুফ্যাকচারিং এবং মেটাবলিক রিপ্রোগ্রামিং গ্রিন টেকের ১২টি ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে। এগুলো বায়োলজিক্যাল প্রসেস ব্যবহার করে ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করে, যা ফসিল-বেসড অ্যালটারনেটিভ।
Earth Catalyst-এর মে ২০২৫ রিপোর্টে সয়েল মেটাজেনোমিক্স এবং হিট-রেজিস্ট্যান্ট রাইস জিন গবেষণা উল্লেখ করা হয়েছে, যা কৃষিতে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বাড়ায়। বাংলাদেশে, IRRI-এর সাথে যুক্ত গবেষণা এগুলো লবণাক্ততা-সহনশীল ফসলে প্রয়োগ করছে।
AI ২০২৫-এ গ্রিন টেকের কেন্দ্রবিন্দু। Renewable Institute-এর রিপোর্টে AI-এর গ্রোয়িং এনার্জি হাঙ্গার উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এটি ডেকার্বোনাইজেশনে সাহায্য করবে। Carbontrail-এর মতে, AI/ML কার্বন ক্যাপচার অপটিমাইজ করে।
নতুন ক্ষেত্র: গ্রিন AI, যা লো-এনার্জি মডেলস তৈরি করে। X পোস্টে Frontiers-এর গবেষণা ডিজিটাল ইকোনমির কার্বন ইমিশন উপর ফোকাস করেছে। বাংলাদেশে, BUET-এর AI-চালিত স্মার্ট গ্রিড গবেষণা চলছে।
বাংলাদেশে গ্রিন টেক গবেষণা ত্বরান্বিত হচ্ছে। International Conference on Sustainable Technologies for Industry 5.0 (STI 2025) ১৮-১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে, যা গ্রিন টেকের উপর ফোকাস করবে। Green Tech 2025 কনফারেন্স থাইল্যান্ডে হলেও বাংলাদেশী গবেষকদের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উৎসব ২০২৫-এ ইয়ুথপ্রেনার নেটওয়ার্ক গ্রিন টেক ইনোভেশন প্রমোট করবে। BUET এবং Dhaka University-এর RET Institute-এ গবেষণা কার্বন ক্যাপচার এবং সোলার টেকে ফোকাস করছে। Green Future-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইন্ডাস্ট্রিতে গ্রিন টেক ট্রেন্ডস যেমন GHG হ্রাস এবং সার্কুলার ইকোনমি গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু।
গ্রিন টেক গবেষণায় চ্যালেঞ্জ যেমন ফান্ডিং অভাব এবং ডেটা অ্যাক্সেস। Energy.gov-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইমার্জিং টেক অ্যাডভান্স করতে R&D ফান্ডিং দরকার। বাংলাদেশে, অবকাঠামো এবং ট্যালেন্ট গ্যাপ চ্যালেঞ্জ, কিন্তু GIZ-এর প্রোজেক্ট এগুলো মিটিগেট করছে।
২০৩০ সালের মধ্যে, গ্রিন টেক গবেষণা নেট-জিরো অর্জন করবে। TechInformed-এর প্রেডিকশনে রিনিউয়েবল এনার্জি এবং সার্কুলার ইকোনমি লিড করবে। বাংলাদেশে, STI 2025-এর মতো ইভেন্ট নতুন কোলাবরেশন তৈরি করবে।
গ্রিন টেক নিয়ে গবেষণার নতুন ক্ষেত্র ২০২৫-এ বিশ্বকে টেকসই করে তুলছে। CCS থেকে গ্রিন নাইট্রোজেন পর্যন্ত এগুলো অভিযোজন এবং মিটিগেশন নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশে স্থানীয় গবেষণা এই ট্রেন্ডসকে অভিযোজিত করবে। আরও গবেষণা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা একটি সবুজ ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।