বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে এখনো প্রধান শক্তির উৎস হলো কাঠ, খড়, শুকনো গোবর এবং অন্যান্য প্রথাগত জ্বালানি। এগুলো শুধু যে অদক্ষ, তাই নয়; বরং পরিবেশ দূষণ, বন উজাড় এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষাপটে বায়োগ্যাস একটি পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী এবং টেকসই শক্তির সমাধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বায়োগ্যাস মূলত জৈব বর্জ্য যেমন গোবর, রান্নাঘরের বর্জ্য, ফসলের অবশিষ্টাংশ, এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ থেকে অ্যানেরোবিক ডাইজেস্টন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। এটি একটি বহুমুখী জ্বালানি, যা রান্না, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এমনকি যানবাহনে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়াটি মূলত অ্যানেরোবিক (অক্সিজেন ছাড়া) পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, কৃষিজ বর্জ্য এবং খাদ্য অবশিষ্টাংশ রয়েছে। বাংলাদেশ গবাদি পশু উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, বছরে লাখ লাখ টন গোবর উৎপন্ন হয়, যা দিয়ে প্রায় সব গ্রামীণ পরিবারের জন্যই বায়োগ্যাস সরবরাহ সম্ভব।
গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের পক্ষে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট বসানো শুরুতে ব্যয়বহুল মনে হতে পারে।
অনেক মানুষ এখনো বায়োগ্যাসের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ জানে না, ফলে প্লান্ট দীর্ঘমেয়াদে নষ্ট হয়ে যায়।
শীতকালে তাপমাত্রা কমে গেলে গ্যাস উৎপাদনও কমে যায়।
বাংলাদেশ সরকার, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (PKSF), গ্রামীণ শক্তি, BRAC এবং অন্যান্য এনজিও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবারগুলোকে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। এসব প্রকল্পে রয়েছে—
যদি গ্রামীণ এলাকায় সঠিকভাবে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি বিস্তার করা যায়, তবে এটি—
বায়োগ্যাস কেবল একটি শক্তির উৎস নয়, বরং এটি গ্রামীণ অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার এক টেকসই সমাধান।
বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বায়োগ্যাস প্রযুক্তি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। সরকারি সহায়তা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটি গ্রামীণ শক্তি চাহিদার বড় অংশ পূরণ করতে সক্ষম হবে। বায়োগ্যাসের মাধ্যমে শুধু জ্বালানি নয়, বরং আমরা একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।