কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা মানুষের মতো চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অনুকরণ করে। স্বাস্থ্যসেবায় এআই ব্যবহৃত হচ্ছে ডেটা বিশ্লেষণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা, এবং রোগী পর্যবেক্ষণে। এআই-এর ক্ষমতা মানুষের চেয়ে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে জটিল ডেটা প্রক্রিয়া করতে পারে, যা স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করছে।
এআই-চালিত টুলস মেডিকেল ইমেজিং (যেমন, এক্স-রে, এমআরআই) বিশ্লেষণ করে ক্যান্সার, হৃদরোগ, বা স্ট্রোকের মতো রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, এআই অ্যালগরিদম ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ মানুষের চেয়ে বেশি নির্ভুলতার সাথে শনাক্ত করতে পারে। প্রাথমিক শনাক্তকরণ রোগের চিকিৎসাকে আরও কার্যকর করে এবং মৃত্যুঝুঁকি কমায়।
এছাড়া, এআই রোগীর স্বাস্থ্য ডেটা (জিনগত তথ্য, জীবনধারা, মেডিকেল হিস্ট্রি) বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য রোগের ঝুঁকি পূর্বাভাস দিতে পারে। এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করে।
এআই রোগীর জিনোমিক তথ্য এবং জীবনধারার ডেটা ব্যবহার করে ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যান্সারের চিকিৎসায় এআই রোগীর জিনগত গঠন বিশ্লেষণ করে কোন ওষুধ বা থেরাপি সবচেয়ে কার্যকর হবে তা নির্ধারণ করে। এটি চিকিৎসার সাফল্যের হার বাড়ায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমায়।
এআই-চালিত টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্ম দূরবর্তী রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে চিকিৎসকের সংখ্যা কম, টেলিমেডিসিন রোগীদের ভিডিও কলের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে সক্ষম করছে।
এছাড়া, পরিধানযোগ্য ডিভাইস (যেমন, স্মার্টওয়াচ) এআই-এর সাহায্যে রিয়েল-টাইমে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, এবং গ্লুকোজ লেভেল পর্যবেক্ষণ করে। অস্বাভাবিক কিছু শনাক্ত হলে এটি চিকিৎসকদের সতর্ক করে, যা জরুরি অবস্থায় জীবন বাঁচাতে পারে।
এআই নতুন ওষুধ আবিষ্কারের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। ঐতিহ্যগতভাবে, একটি নতুন ওষুধ তৈরি করতে ১০-১৫ বছর এবং বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। এআই অ্যালগরিদম রাসায়নিক যৌগ বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ওষুধের প্রার্থীদের দ্রুত শনাক্ত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উন্নয়নে এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এআই-চালিত চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল থেরাপিস্ট মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য সহায়তা প্রদান করছে। এই টুলস উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা শনাক্ত করে প্রাথমিক পরামর্শ দেয়। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সামগ্রিক সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এআই-চালিত রোবটিক সার্জারি জটিল অস্ত্রোপচারকে আরও নির্ভুল এবং নিরাপদ করছে। রোবটিক সিস্টেম মানুষের তুলনায় কম ত্রুটি করে এবং পুনরুদ্ধারের সময় কমায়। এটি রোগীদের জটিলতা এড়াতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে এআই-ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এর সম্ভাবনা অপরিসীম। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে এআই প্রযুক্তি প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ:
তবে, গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো, এবং দক্ষ জনবলের অভাব এআই প্রয়োগে বড় চ্যালেঞ্জ।
এআই-এর সম্ভাবনা অপরিসীম হলেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
এআই-এর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:
ভবিষ্যতে এআই স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করবে। কিছু সম্ভাব্য ক্ষেত্র হলো:
এই প্রযুক্তিগুলো বাংলাদেশে প্রয়োগ করা গেলে স্বাস্থ্যসেবা আরও সাশ্রয়ী এবং সুলভ হবে, যা মানুষের আয়ু বাড়াতে সহায়তা করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণ, ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা, টেলিমেডিসিন, এবং ওষুধ আবিষ্কারের মাধ্যমে এআই মানুষের আয়ু বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি করছে।
বাংলাদেশে এআই-এর সঠিক প্রয়োগের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ জনবল, এবং নীতিমালার প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এআই স্বাস্থ্যসেবাকে আরও দক্ষ এবং সুলভ করে তুলবে, যা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।